সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন
কাজী জমিরুল ইসলাম মমতাজ, স্টাফ রিপোর্টার (সুনামগঞ্জ):
সুনামগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহি ষোলঘর মাঠে মাসব্যাপি শুরু হওয়া শিল্প ও পণ্য মেলার আড়ালে বিনোদনের নামে চলছে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিনব কৌশল। মেলার মাঠের ভেতরে শিশুদের জণ্য রাখা হয়েছে হরেক রকম বিনোদনের ব্যবস্থা। এই বিনোদনের নামে আয়োজকরা কামিয়ে নিচ্ছেন টিকেট বাণিজ্যের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ। আউল-বাউল ও সংস্কৃতির জেলা হিসেবে দেশব্যাপি সুনাম রয়েছে এই সুনামগঞ্জের। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে জেলা শহরের ষোলঘর ষ্টেডিয়াম মাঠে জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে ও বাংলাদেশ বেনারসী মসলিন এন্ড জামদানি সোসাইটির ব্যবস্থাপনায় মাসব্যাপী শুরু হয়েছে এই শিল্পও পণ্য মেলা। এই মেলাটি বাহির থেকে শিল্প ও পণ্যমেলা মনে হলেও ভিতরের দৃশ্যপট ব্যতিক্রম ও উল্টো। মেলার আড়ালে এক ধরণের জুয়া খেলার আখড়ায় পরিণত হয়েছে মেলার ভিতরের চারপাশ। আর প্রতিনিয়ত মাইকের বিকট আওয়াজ আশপাশের পাড়া-মহল্লার বাসিন্দাদের ছেলেমেয়ে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনার বারটা বাজিয়ে দিচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মাইকের আওয়াজে একদিকে যেমন পড়াশোনার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে অপরদিকে শব্দ দূষণে স্থানীয়রা অস্বস্তিতে রয়েছেন বলে অনেকেই জানান।
১০ টাকায় টিকেট কিনে মেলায় প্রবেশ করছেন ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের নিয়ে তাদের অভিভাবক ও দর্শনার্থীরা। মেলার ভেতরের চারপাশ ঘুরে দেখা যায়, শিল্প ও পণ্য সামগ্রী তেমনটা নেই আর যে সমস্ত পণ্য মেলায় স্থান পেয়েছে সেগুলোর গুণগত মান তেমন একটা ভাল নয় এবং দাম ক্রেতাদের নাগালের বাহিরে। মেলায় বিনোদনের জন্য অধিকাংশ বাচ্চাদের মন মাতানো ব্যবস্থা রয়েছে। অতিরিক্ত টাকায় টিকেট নিয়ে প্রতিদিন বিনোদন উপভোগ করতে হিমশিম খাচ্ছেন মেলায় আসা নি¤œ আয়ের মানষজন। নুন আনতে যাদের পানতা পুড়ায় তার মধ্যে আবার বসেছে শিল্প ও পণ্য মেলার নামে সার্কাস, লটারী, স্লিপার, নাগরদোলা, ওয়াটার বেলুন, যাদুটোনা, ওয়াটার বোর্ডসহ বিভিন্ন ধরণের বিনোদনের ব্যবস্থা।
মেলায় ৭০টিরও বেশি স্টল বসেছে বিভিন্ন নিন্মমানের পণ্য সামগ্রী নিয়ে। পাশাপাশি বাচ্চাদের অতিরিক্ত বিনোদনে ঘিরে রয়েছে পুরো মেলার আঙ্গিনা। যেখানে অন্যান্য বছরের বাণিজ্য মেলার তুলনায় তিনগুণ বাড়তি বিনোদনের ব্যবস্থা থাকলেও। এই শিল্পও পণ্য মেলার নামে সাধারণ মানুষদের পকেট কাটার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রবেশ টিকেটের নামে চলছে লটারি ব্যবসা ১টির জায়গা একেক জন ৪০/৫০টিরও বেশি টিকেট সংগ্রহ করছেন মটর সাইকেল আর গাড়ি পাওয়ার আশায়। এদের মধ্যে রয়েছেন অধিকাংশ দিন মজুর পরিবারের শিশু সন্তানরা। যারা সারাদিনের পায়ের ঘাম মাথায় পেলে রোজগারের টাকা দিয়ে তাদের বাচ্ছাদের বিনোদন উপভোগ করতে এই টিকেটগুলো কিনছেন।
সরেজমিনে ঘুরে মেলায় আসা দর্শনাথীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বাচ্চাদের বিনোদন উপভোগ করাতে গিয়ে আমাদের পকেট খালি হয়ে যাচ্ছে। বিনোদনের নামে মেলায় বসেছে স্লিপার যমুনা পার্ক যা শিশুদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষনীয় মন কাড়ানো খেলা। যাদের টাকা আছে তাদের সন্তানরাই এই পণ্য মেলায় এসে বাচ্ছাদের বিনোদন হিসেবে খ্যাত স্লিপার বিনোদন উপভোগ করতে পারবেন। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা আমাদের সন্তানদের জন্য এই বিনোদনের ব্যবস্থা মানেই হলো আকাশে রাতে চাদের আলো অনুভব করে কুয়ারপাড়ে রাত কাটানো ছাড়া কিছুই নয়। বাচ্ছাদের স্লিপার বিনোদনের টিকেট ১৫ মিনিটের জন্য কিনতে হয় ৩০০ টাকায়, ওয়াটার বেলুন প্রতি ৫ মিনিটে ১০০ শত টাকায় টিকেট কিনতে হয়। এছাড়াও চড়া দামে বিনোদনের জন্য একাধিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যা সুনামগঞ্জের মানুষজন ও তাদের সন্তানদের আকৃষ্ট করতে। আয়োজকরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিনোদনের আড়ালে অশ্লীল নৃত্য পরিচালনা করে কামিয়ে নিচ্ছেন অধিক মোনাফা।
বিনোদনের মধ্যে রয়েছে নাগরদোলা যার টিকেট মুল্য ৩০ টাকা, নৌকা দোলনা টিকেট ৫০ টাকা, রেলগাড়ি ৩০ টাকা, হেলিকপ্টার বিনোদন ৩০ টাকা, মটরসাইকেল ও গাড়ির জেন্ডার গেইম টিকেট মুল্য ৩০ টাকা, হাতিঘোড়া চড়কি টিকেট ৩০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে বড়দের জন্য সবচেয়ে বেশি সময়ের বিনোদন দিবরুল সার্কাস যার টিকেট মুল্য ৫০ টাকা, ৭০ টাকা, ৯০ টাকা প্রায় আড়াই ঘন্টার এই বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শতশত দর্শক। শুধুমাত্র রাক্ষসী বিনোদন যমুনা পার্কে বেবি বিনোদনের ব্যবসার নামে তারা প্রতিনিয়ত কামিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত লাখ লাখ টাকা। এই রাক্ষসী বিনোদন বন্ধ করে মেলায় সাধারণ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের জন্য সহনীয় পর্যায়ের টিকেট বিনোদন রাখার জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট দাবী জানাচ্ছেন পাশাপাশি অতিরিক্ত টিকেটের বিনোদন বন্ধে আয়োজনকারী ও কতৃপক্ষ নজর দিবেন এমন দাবী ভূক্তভোগী সুনামগঞ্জ বাসীর।
এ ব্যাপারে মেলার মালিক বাবলু মিয়ার কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা ব্যবসা করতে এসেছি আপনারা পত্রিকায় নিউজ না করে আমাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করুন।
এ ব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রাজা চৌধুরী বলেন, একটি মেলা চলবে সরকারের নীতিমালার আলোকে। কেহ যদি বিনোদনে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন এবং মেলার সুষ্টু পরিবেশ বিনষ্ট করতে মেলায় অশ্লীল নৃত্য চালানোর চেষ্টা করেন তাহলে অবেশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপরে জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আহাদ জানান, এই বিষয়গুলো তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ শরিফুর ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।